গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির :
শীত হলো মুমিনের জীবনে ইবাদত-বন্দেগির শ্রেষ্ঠ সময়। ইবাদতের বসন্তকাল। বিভিন্ন ইবাদত পালনের সুবর্ণ সুযোগ হয়ে ওঠে এ ঋতু। বছরের অন্যান্য ঋতুতে যেসব ইবাদত আদায় কষ্টসাধ্য হয়ে থাকে, শীতের ঋতুতে তা পালন করা সহজতম হয়ে যায়। যেমন-রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ ও দিনে নফল রোজা। রাসুল (সা.) একাধিক হাদিসে শীতকালের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য তুলে ধরেছেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শীত হলো মুমিনের বসন্ত। শীতে রাত বড় হয়ে থাকে, ফলে সে নামাজের জন্য জাগ্রত হয়। আর দিন হয়ে থাকে ছোট। ফলে সে রোজা রাখে।’ (মুসনাদে আহমদ : ১১৭১৬)
বসন্তকালে যেভাবে গাছগাছালি ও প্রকৃতি পত্রপল্লবে সমৃদ্ধ থাকে, পশুপাখি যত ইচ্ছা খেয়ে তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে, ঠিক তেমনি মুমিন শীতকালের দীর্ঘ রাতকে ইবাদতে কাটিয়ে এবং দিনকে রোজায় কাটিয়ে লাভ করতে পারে প্রভূত আত্মিক উন্নতি। অন্য হাদিসে এসেছে, ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘ইবাদতকারীদের জন্য শীতকাল হলো গনিমতস্বরূপ’(হিলইয়াতুল আউলিয়া : ১/৫১)। অর্থাৎ শীত এমন গনিমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) যা কোনো রক্তপাত বা চেষ্টা মেহনত কিংবা কষ্ট ছাড়াই অর্জন হয়েছে। সবাই কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই এ গনিমত স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাভ করে। কোনো প্রচেষ্টা বা পরিশ্রম ব্যতিরেকে তা ভোগ করে।
সাহাবা ও তাবেঈনদের মাঝে শীতের আগমনের ফলে ইবাদতের ব্যাপক উদ্দীপনা সৃষ্টি হতো। ইবাদতের নবউদ্যম নিয়ে শীতকে তারা স্বাগত জানাতেন এবং এটাকে অমূল্য গনিমত মনে করে লুফে নিতেন। তাঁরা একে অপরকে ইবাদতের প্রতি উৎসাহ দিতেন। হজরত উবাইদ ইবনে উমাইর (রা.) বলেন, ‘কুরআন তেলাওয়াতের জন্য তোমাদের রাত দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। সুতরাং কুরআন পড়তে থাকো। রোজা রাখার জন্য তোমাদের দিনকে ছোট করা হয়েছে। সুতরাং দিনের বেলা রোজা রাখো। শীতের রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করা (সওয়াবের ক্ষেত্রে) গ্রীষ্মের দিনে রোজা রাখার সমান’ (লাতায়িফুল মায়ারিফ পৃ. : ৩২৭)। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘শীতকালকে মুবারকবাদ। এতে বরকতের ঝরনাধারা নাজিল হয়। রাত দীর্ঘ হয় কিয়ামুল্লাইলের জন্য। আর দিন ছোট হয় রোজা রাখার জন্য।’ (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃ. : ৩২৭)
তা ছাড়া শীত-মৌসুমে আমরা আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য নেয়ামত ভোগ করে থাকি। অনেকেই হেমন্তের শেষ ভাগ ও শীতকে মনে করেন পিঠা-পায়েসের মহোৎসব। কুয়াশাযুক্ত হিমশীতল সকালে পিঠা খেতে কার না ভালো লাগে। গ্রামে কী শহরে-সবখানে চলে পিঠা উৎসব। নতুন ধানের চালের গুঁড়ি আর খেজুর গুড় দিয়ে বানানো পিঠা ছোটবড় সবার পছন্দ। খেজুরের গুড় আর নতুন চাল দিয়ে তৈরি হয় মজাদার পিঠাপুলি। এই পিঠা, পায়েস, খেজুরের রস, গুড় এবং বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, তরিতরকারি ও শীত নিবারণের বস্ত্রাদি সবই মহান আল্লাহর দান। আল্লাহ আমাদের এসব নেয়ামত দান করেছেন। আমাদের উচিত, মেহেরবান রবের শুকরিয়া আদায় করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তাহলে আমি তোমাদের নেয়ামত আরও বাড়িয়ে দেব।’ (সুরা ইব্রাহিম : ৭) ।।
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ধর্ম ও সমাজ সচেতন লেখক, সাংবাদিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপস্থাপক, সিনিয়র সহ-সভাপতি বুড়িচং প্রেসক্লাব, কুমিল্লা।০১৭১৮-২২৮৪৪৬
কমেন্ট করুন